মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জোনভিত্তিক লকডাউনে যাচ্ছে সরকার, এমন গুঞ্জনের মধ্যে রাজধানীর বাজারে একদিনের ব্যবধানে চাল, আলু, বয়লার মুরগিসহ সাতটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ৬৬ দিন সরাদেশে লকডাউন জারি রাখার পর গত ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধিনিধেষ তুলে নেয়া হয়। তবে এরপর প্রতিদিন করোনার সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এলাকা ধরে জোনভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এরই অংশ হিসেবে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুরহার অনুযায়ী লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করা হচ্ছে। লাল বা ‘রেড জোন’-কে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দুদিন ধরে গুঞ্জন ছড়িয়েছে ঢাকার ৪৫ এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগির এসব এলাকা লকডাউন করা হবে। এমন গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে চাল, মুরগি, ডাল, আলু কেনার পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। এতে এসব পণ্যের দামও বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই দিনে সব থেকে বেশি বেড়েছে বয়লার মুরগির দাম। চলতি সপ্তাহে একাধিক দফায় দাম বেড়ে বয়লার মুরগির কেজি আবার ১৭০ টাকায় উঠেছে, যা গত শুক্রবারও ছিল ১৪০ টাকার মধ্যে।
কেনাকাটা বাড়ায় দাম বেড়েছে সব ধরনের চালের। মোটা চালের দাম বেড়ে কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা দুদিন আগে ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকার মধ্যে। ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। চিকন চালের দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে।
দুদিন আগে ২৬ থেকে ২৮ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আলুর দাম বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। দেশি রসুনের দাম বেড়ে কেজি আবার ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কয়েক দফা দাম কমে গত সপ্তাহে দেশি রসুনের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছিল। এখন তা আবার বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা হয়েছে। রসুনের সঙ্গে দাম বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের। ৪০ টাকা থেকে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
দেশি রসুনের পাশাপাশি দাম বেড়েছে আমদানি করা রসুনেরও। ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুনের দাম বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা হয়েছে। ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১১৫ টাকা হয়েছে। গত দুই দিনের দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ছোলাও। রোজার পর দাম কমে ৬০ টাকায় নেমে আসা ছোলার কেজি বেড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে।
গত দুই দিনে এসব পণ্যের দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিটির তথ্য অনুযায়ী, ১৪ জুন চাল, মসুর ডাল, রসুন, আলু, বয়লার মুরগি ছোলার দাম বেড়েছে। এর মধ্যে মোটা চালের ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, মাঝারি চালের ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, বয়লার মুরগির ২২ দশমিক ২২ শতাংশ, মসুর ডালের ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ছোলার ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, আলুর ১৬ শতাংশ, আমদানি করা রসুনের ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং দেশি রসুনের ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।
তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে চিকন চাল, আটা, লবঙ্গ, সুপার পাম অয়েল, লুজ (খোলা) ও বোতলের সয়াবিন তেল, চিনি, পেঁয়াজ, এলাচ ও জিরার দাম কমেছে।
হঠাৎ চালের দাম বাড়ার বিষয়ে খিলগাঁও তালতলার চাল ব্যবসায়ী জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘নতুন চাল আসায় কিছু চালের দাম কম ছিল। তবে কয়েকদিন ধরে চাল বিক্রি বেড়েছে। এ কারণেই হয়তো দাম একটু বেশি। চালের এই টান (বাড়তি বিক্রি) শেষ হলে তখন হয়তো দাম একটু কমতে পারে। তবে বিক্রি স্বাভাবিক থাকলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ, শুনতে পারছি ধানের দাম নাকি এবার বাড়তি।’
বয়লার মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী জহির বলেন, ঈদের পর কয়েক দফা বয়লার মুরগি দাম কমে। তবে গত সপ্তাহে বয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যায়। এখন আবার লকডাউ হবে এমন গুঞ্জন শুনছি। এতে দুদিন ধরে বিক্রি একটু বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বয়লার মুরগির দাম। ঈদের আগে ১৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা বয়লার মুরগি ঈদের পর ১৪০ টাকায় নেমেছিল। এখন আবার তা ১৭০ টাকা হয়েছে।
আলু, ডাল, রসুনের দাম বাড়ার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, আলুর দাম এমনিই কয়েকদিন ধরে বাড়তি। এ পরিস্থিতিতে দুই দিন ধরে মানুষ বাড়তি পরিমাণে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল কিনছে। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে। ৪০ টাকার দেশি পেঁয়াজের কেজি বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে, তবে আমদানি করা পেঁয়াজ আগের মতোই ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ২৬ টাকার আলুর কেজি ৩০ টাকা হয়েছে। ৮০ টাকার রসুন ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে শুনছি ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল আবার লকডাউন হবে। এ কারণেই হয়তো মানুষ বাড়তি কেনাকটা করছে। এর আগে করোনাভাইরাসের শুরুর দিকেও এমন বাড়তি কেনাকাটা শুরু হয়েছিল। ফলে সবকিছুর দাম বেড়ে গিয়েছিল।
লাইট নিউজ