অফিস-আদালত ও গণপরিবহন চালুসহ লকডাউন শিথিলকালে সরকারের দেওয়া শর্ত কঠোরভাবে প্রতিপালনের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নিজেদের স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের দেওয়া এ ছাড় ফ্রি স্টাইলে অপব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ মে) সংসদ ভবনের সরকারি বাসভবন থেকে এক ভিডিওবার্তায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
বিশ্বের অনেক দেশ ক্রমান্বয়ে লকডাউন শিথিল করছে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘করোনায় খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করেছে। কোথাও কোথাও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার দিকে যাত্রা শুরু করেছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের তালিকায় থেকেও অর্থনীতির স্বার্থে লকডাউন শিথিল করেছে। জীবন ও জীবিকার মাঝে ভারসাম্য তৈরি, অর্থনীতির চাকা সচল রাখা, সামাজিক শৃঙ্খলা ও সুরক্ষার স্বার্থে এটা দরকার। ইতোমধ্যে সরকার সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই পালনীয় কিছু শর্ত থাকছে— যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জরুরি কিছু নির্দেশনাসহ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। দেশবাসীকে বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি খাতসহ সবাইকে শর্তাবলী কঠোরভাবে প্রতিপালনে অনুরোধ জানাচ্ছি নিজেদের স্বার্থে।
যোগ্য মত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে জীবন-জীবিকার মাঝে সাযুজ্য বিধানের যে প্রয়াস চলছে, তার থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তার সাহসী ও মানবিক নেতৃত্বে আমরা ইতোপূর্বে অনেক সংকট থেকে উত্তরণ লাভ করেছি। ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসেবে তার দক্ষতার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। আপনারা মনোবল না হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতি আস্থা রাখুন। সরকারকে সহযোগিতা করুন। সংকটকে সম্ভাবনায় রূপদানে আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
করোনা সংকটকালে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনাকারীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের উচিত ধর্ম-বর্ণ-পেশা ভেদে অদৃশ্য শত্রু করোনা মোকাবিলা করা। করোনা আমাদের কারও বন্ধু নয়, কাজেই এ সংকটকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কৌশল অবলম্বন হবে আত্মঘাতী।’
গণপরিবহন চালু প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকার গণপরিবহন চালুর বিষয়ে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে বিআরটিএ-সহ বসে আলাপ-আলোচনা করে একটি পরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ করছি। গণপরিবহন পরিচালনায় যাত্রী, চালক ও শ্রমিকদের সুরক্ষায় সুনির্দিষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে সবাইকে। যাত্রী-মালিক-শ্রমিক সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে করোনা সংক্রমণের বিস্তার যেন না ঘটে এবং সংকটকে আরও ঘনীভূত না করে। জনস্বার্থে সরকারের দেওয়া এ ছাড় ফ্রি-স্টাইলে অপপ্রয়োগ করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার (২৯ মে) পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিআরটিএকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
গণপরিবহন চালু প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘গণপরিবহন চালুতে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি সামনে এসে যায়। বেড়ে যায় উদ্বেগ। পরিবহন চালক- শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি পালনের পাশাপাশি ট্রাফিক আইন যথাযথ মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি। করোনার মৃত্যুর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় যাতে মৃত্যুর মিছিল দেখতে না হয়, এজন্য সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।
লাইটনিউজ/এসআই