বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

চরফ্যাশনে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ভোলার চরফ্যাশন কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সিন্ডিকেটের কারনে বিপাকে পড়েছে ক্রেতারা। সমিতির বেঁধে দেওয়া সিদ্ধান্তে ওষুধ ব্যবসায়ীরা এমআরপি মূল্যে ওষুধ বিক্রি করছে, এতে নিরুপায় হয়ে এমআরপি মূল্যে ওষুধ কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে ক্রেতাদের। মানবিক কারনে কোন ব্যবসায়ী ক্রেতাদের কাছ থেকে মূল্যের চেয়ে দাম কম রাখলে জরিমানা গুনতে হয় দেড় হাজার টাকা। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যবসায়ী জরিমানার টাকা পরিশোধ না করলে দ্বিগুন টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে সমিতিতে। যেসব ঔষধের দোকান ওই সমিতির সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত নয়, সেসব দোকানীদের কাছে ওষুধ না বিক্রির জন্য কোম্পানীর লোকদের জানিয়ে দেয় সমিতির নেতারা। সমিতিতে ভর্তির সাপেক্ষে তাদেরকে ওষুধ দেওয়া যাবে বলে এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সমিতি থেকে। এমন-ই অভিযোগ করেছেন একাধিক ভূক্তভোগী ওষুধ ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসন এসব অভিযোগের বিষয়ে চরফ্যাশন কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতৃবৃন্দকে জরুরি ডেকে জরিমানার প্রথা শিথিল করতে বলেন।কিন্তু তারা প্রশাসনকে কথা দিয়ে কথা রাখেনি।

এসব বিষয়ে ঔষধের বিভিন্ন দোকানে মাসব্যাপি কয়েকদফা অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অজানা অনেক কাহিনী। জানা গেছে, চরফ্যাশন কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির জরিমানা আদায়ের কয়েকটি রশিদও সংগ্রহ করা হয়েছে। জরিমানা আদায়ের রসিদ নান্বার গোপন রাখার শর্তে একাধিক ঔষধ ব্যবসায়ী দীর্ঘ শ্বাস ফেরে বলেন আমরা সমিতি ও সম্পাদক ও শাহিনের কাছে জিম্মি।জানুয়ারি- জুন মাস পর্যন্ত পৌরসভার মধ্যে শহরের ৬টি ওষুধের দোকানকে জরিমানা করেছে সমিতি।

চলতি বছরে একাধিক দোকানে জরিমানার করার বিষয়টি গোপন রেখে জরিমানা আদায়ের সুনির্দিষ্ট কারণ এড়িয়ে যান চরফ্যাশন কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এমআরপি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক মো. আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘চরফ্যাশন পৌর শহরে কেনা দামে ওষুধ বিক্রি করায় এক দোকানিকে ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০২২ সালের শুরু থেকে একটি দোকানকে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের সংগঠনের রুলের আয়ত্তে আছে এমন নিয়ম অমান্য করা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধ পেলে জরিমানা করা হয়। পৌরসভার মধ্যে অন্ততঃ ১৫০টি ওষুধের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ১৩২টি দোকান সমিতির অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া উপজেলায় আড়াই হাজারের মতো ওষুধের দোকান আছে যারা সমিতির অন্তর্ভুক্ত নয়।
কেমিস্ট এন্ড ড্রাগস সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ বলেন,আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়।আমি অযথা কাউকে জরিমানা করিনা,কেমিস্ট এন্ড ড্রাগ সমিতির কার্যকরি সদস্যদের সিদ্ধান্তে এই বিধান করা হয়েছে।
অসাধু কোন ঔষধ ব্যবসায়ীরা যেন মিটফোর্টের নকল ওষুধ বিক্রি করতে না পারে সেজন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা কমদামে ঔষধ বিক্রি করলে জরিমানার বিধান সহ কিছু নিয়মাবলী কড়াকড়ি আরোপ করেছি।ঔষধের এমআরপি সিস্টেম মানুষ না চাইলে আমরা সমিতির সভা ডেকে সিদ্ধান্ত শিথিল করবো।

চরফ্যাশন শহরের এক ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, ‘একজন ক্রেতা আমার দোকান থেকে ৯০০ টাকার ওষুধ কিনছেন। ওই ক্রেতার কাছ থেকে ২০ টাকা কম রেখেছি। এই অপরাধে ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে চরফ্যাশন কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি। সমিতির কঠোরতায় এমআরপি মূল্যে ওষুধ বিক্রি করতে বাধ্য হই।অভিযোগ রয়েছে সমিতির সম্পাদকসহ আরও কিছু সদস্য মিলে এমআরপি মূল্যে ওষুধ বিক্রি করতে এমন সিন্ডিকেট তৈরি করে জরিমানার টাকা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছে।
ভূক্তভোগী একাধিক ওষধ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ নিজের স্বার্থে এমন মনগড়া নিয়ম চালু করায় এতে সাধারণ মানুষ জিম্মি। তাদের এই নিয়ম মানতে গিয়ে ক্রেতাদের সাথে ঔষধ ব্যবসায়ীদের সাথে প্রায়শ: তর্ক-বিতর্ক হয়। যাদের ড্রাগ লাইসেন্স নাই, তাদের টাকার বিণিময়ে ব্যবসা করার সুযোগ দেয় সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকরা।

গত সপ্তাহে চরফ্যাশন পৌর শহর থেকে অসুস্থ বাবার জন্য প্রায় ৭০০ টাকার ওষুধ ক্রয় করেন মো. শরিফ। তিনি বলেন, ‘যত টাকার ওষধ কেনা হোক না কেন, এমআরপিতে কিনতে হয়। সব ওষুধের দোকানে একই নিয়ম। হাজারে ১০ টাকাও ছাড় দেয় না। এমন নিয়ম দেশের কোথাও নেই। এরা সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম করছেন। যেখানে ড্রাগ সমিতির নেতারা ভেজাল ও নিম্মমানের ওষুধ বিক্রি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে। অথচ সেখানে, সিন্ডিকেট তৈরি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।’
সমিতির কালো আইনে ব্যবসায়ী এমআরপিতে ওষুধ বিক্রি বাধ্য করায় ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে।’

চরফ্যাশন কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি আবু কাওছার বাচ্চু বলেন, আমার এখন ঔষধের দোকান নাই,আমি অনেকদিন যাবৎ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগ সমিতি থেকে দূরে।আমি শারিরিকভাবে খুবই অসুস্থ।নামমাত্র সমিতির সভাপতি থাকলেও সমিতিতে আমার কোন কার্যক্রম নেই।’সব কিছু সে নিয়ন্ত্রণ করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ।

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল মতিন বলেন, কোন ব্যবসায়ীকে রশিদের মাধ্যমে সমিতি জরিমানা করার বিধান নেই।এটা জনস্বার্থ পরিপন্থী।

ভোলা জেলা ওষুধ তত্বাবধায়ক ইফ্রাহিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘চরফ্যাশন উপজেলায় ফার্মেসীগুলোতে এমআরপি মূল্যে ওষুধ বিক্রি করার বিষয়টি কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে, সরকারি নিয়ম হলো এমআরপি মূল্যের বেশি কেউ ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না।তবে কেউ মানবিক কারনে মুল্য কম নিলে তার বিরুদ্ধে সমিতি জরিমানার বিধান আইনগতভাবে অপরাধ। চরফ্যাশন উপজেলায় ওষুধ বিক্রির ড্রাগ লাইসেন্স আছে প্রায় ৪০০ প্রতিষ্ঠানের। লাইসেন্স বিহীন মার্ক করা ৭০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।এখন সংখ্যায় আরও বাড়তে পারে।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD