শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন

স্বার্থবাদী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, দেশে কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী আছে। দীর্ঘদিন থেকে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে। তাদের অবস্থানে হাত দেওয়া সরকারের জন্যও অনেক সময় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রধানমন্ত্রীকেও আসন ঠিক রাখতে খেলাপিদের সঙ্গে আপস করতে হয়।

সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেটবিষয়ক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। সংলাপের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘আইএমএফের সময়কালে অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের কথা জাতীয় বাজেটে কীভাবে প্রতিফলিত হতে পারে।’

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এবং সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান। এছাড়া পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কর ও ঋণখেলাপি নিয়ে আলোচনা আসছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকার যথেষ্ট কাজ করছে। তিনি বলেন, এখানে কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী আছে। দীর্ঘদিন থেকে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তাদের সুবিধাজনক অবস্থানে হাত দেওয়া সরকারের জন্যও অনেক সময় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি আরও বলেন, সরকার এসব বিষয়ে কিছু করতে চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ (ভেরি মাচ কমিটেড)। কিন্তু তাকেও দিন শেষে (অ্যান্ড অব দা ডে) তার আসন ঠিক রাখতে হবে। আর আসন ঠিক রাখার জন্য অনেক সময় আপস (কম্প্রোমাইজ) করতে হয়। এটি আপনারা বুঝতে পারেন।

মন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতির কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, মুহূর্তে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। গত মাসে সামান্য কমেছে। তবে আরও কমানোর চেষ্টা চলছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আইএমএফের শর্ত নিয়ে কথা আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আইএমএফের কোনো শর্ত নেই। সংস্থাটি এখানে বড় কোনো ফ্যাক্টর নয়। আমরা তাদের ওপর নির্ভরশীল নই। এক্ষেত্রে আইএমএফ মিশন কিংবা দাতাগোষ্ঠী শব্দগুলো ঠিক নয়। কারণ আমরা তাদের সাহায্য নয়, ঋণ নিয়ে থাকি।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভর্তুকির ব্যাপারে বিভিন্ন কথা আসছে। কিন্তু ভর্তুকির ভালো ও মন্দ দুটিই আছে। খারাপ ভর্তুকি ভালো ভর্তুকিকে দূরে সরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, শক্তিশালী গ্র“প ডিনার খাওয়ায়, অভিনন্দন দেয়, সংবর্ধনা দেয়, ফুলের মালা ক্রেস্ট দেয়। এরপর তারা ভর্তুকি আদায় করে নেয়। এটাকে আমরা খারাপ ভর্তুকি বলি। এগুলো থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এছাড়া প্রণোদনার নামে উন্মাদনা থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসা উচিত।

তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা আসছে। বণ্টনে সমস্যা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমি বরাদ্দ বাড়ানোর পক্ষে। এখানে যারা জড়িত তাদেরও সমস্যা আছে, সরকারপ্রধানেরও সমস্যা আছে। কারণ আগে থেকে যারা বোতল থেকে দুধ খেয়ে আসছে, তাদের মুখ সরানো যাচ্ছে না। ছোটবেলা আপনারা দেখেছেন, বাচ্চারা বোতল কামড় দিয়ে ধরে। এই কামড় দিয়ে ধরার স্বভাব এখানেও আছে। মা হিসেবে সরকারপ্রধানকে যা করতে হয়, তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে অথবা তিতা কিছু দিয়ে ছাড়াতে হয়।

মূল প্রবন্ধের ব্যাখ্যায় মন্ত্রী বলেন, দেশে তথ্যপ্রবাহে ঘাটতি আছে, এটি আমরা সবাই জানি। গ্রামের মানুষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ খুবই কম। তিনি বলেন, আমার এলাকার মানুষ, যারা আমাকে ভোট দেয়, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। তারা আমার কাছেই আসে না। আমার ভাষা বোঝে না। এর কারণ হলো অর্থনৈতিকভাবে আমাদের মধ্যে ফারাক সৃষ্টি হয়েছে। আমার গ্রামের ছেলেরা স্কুলে যায় না। বাপ-মা তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানে পাঠায়। এটা আমাকে পীড়া দেয়। তিনি বলেন, সরকারের বেশ সফলতা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিদ্যুৎ। একটা কাজের জন্য যদি সরকার পরপারে গিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেটি হলো ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো।

এ সময় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আইএমএফ কর্মসূচিভুক্ত দেশে বাজেট অনাথ থাকে। আর আইএমএফ থাকে বাজেটের পালক পিতা। বাংলাদেশে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন হলে এর চাপ সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যেসব দেশে আইএমএফের কর্মসূচি চালু আছে, সেসব দেশে বৈষম্য বাড়ছে। সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ বেশ কিছু সংস্কারমূলক কর্মসূচি শুরু করেছে। এমনিতেই বাংলাদেশে বৈষম্য বেশি। এরপর আইএমএফের কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে বৈষম্য আরও বাড়াবে। তিনি বলেন, আইএমএফের কর্মসূচি ও সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে এর চাপ গরিব মানুষের ওপর পড়বে। অর্থাৎ গরিবকে এর মূল্য দিতে হবে। তাই আইএমএফের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এছাড়া এসব সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলে দেশে বৈষম্য আরও বাড়বে।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD