মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১১:১২ পূর্বাহ্ন

‘অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : আজ পহেলা বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ। ঐতিহ্যবাহী এ দিনটিতে বাঙালি তার প্রাণের আবেগ ঢেলে দেয়। মেতে ওঠে নানা উৎসবে। তবে গত বছরের মতো এবারও সেই আবেগে ভাটা পড়েছে। গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে মহামারি করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতি এ ভাইরাস আঘাত হেনেছে বাংলাদেশেও।

করোনার থাবায় সবকিছু কেমন বিবর্ণ, বিমর্ষ হয়ে গেছে। কালো ছায়ায় ঢেকে গেছে যেন। আজ আর রমনার বটমূলে প্রাণের উচ্ছাস নেই। ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের সুর ছুঁয়ে যাওয়া নেই। চারুকলার শিল্পীদের রঙতুলির আঁচড় নেই। অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলে জীবনকে ভরিয়ে দেয়ার জন্য নেই মঙ্গলযাত্রা। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সেই চিরচেনা দৃশ্য আজ আর দেখা যাবে না। না দেখা আর না পাওয়ার মধ্যে তবুও আশা জেগে থাকবে, প্রত্যাশা ডানা মেলে থাকবে। ঘরে ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছে আনন্দের সেই বাঁধভাঙা জোয়ার। তবুও আজ বাঙালির প্রাণের পহেলা বৈশাখ।

ছায়ানট বর্ষবরণ শুরু হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল ছাড়া নিয়মিতভাবেই রমনার বটমূলে বর্ষ আবাহনের ডাক দিয়ে অনুষ্ঠান করে এসেছে। এর ব্যতিক্রম ঘটলো দুইবার। কারণ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আজ বুধবার থেকে সারাদেশে সাতদিনের লকডাউন শুরু হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিটিভিসহ বেসরকারি টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। জাতীয় দৈনিকগুলো বের করেছে ক্রোড়পত্র।

আজ পুরনো দিনের শোক-তাপ-বেদনা-অপ্রাপ্তি-আক্ষেপ ভুলে অপার সম্ভাবনার দিকে, স্বপ্নের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়ার দিন। সকল ভয়কে জয় করার মানসে নতুন করে জেগে ওঠার উপযুক্ত সময়। কবিগুরুর ভাষায় : নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে/শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে…। একই আনন্দের বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে নজরুল লিখেছেন : তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নুতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর…।

সবার মনে পহেলা বৈশাখের সেই চিরায়ত গান গুঞ্জরিত হলেও এবারও তার আবেদন ভিন্ন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাঙালি এবারও ঘরবন্দি হয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় পালন করবে পহেলা বৈশাখ।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।

দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও মঙ্গলশোভাযাত্রা হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

দেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবস্থা বিবেচনা করে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। প্রতি বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় দেশের সংস্কৃতি এবং রাজনীতির সাথে প্রাসঙ্গিক একটি থিমকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়।

করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পহেলা বৈশাখ-১৪২৮ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সশরীরে কোনও মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হবে না। ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গণজমায়েত করা যাবে না। তবে প্রতীকী কর্মসূচি হিসেবে চারুকলা অনুষদের শিল্পীদের তৈরি মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন মুখোশ ও প্রতীক প্রদর্শন এবং সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম, বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী উপকরণ, বিভিন্ন রঙের বিশাল মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি যেমন : প্রজাপতি, ঐতিহ্যবাহী পুতুল থাকে যা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোককাহিনী তুলে ধরে। কিন্তু সব থেকেই বঞ্চিত বাঙালি। কিন্তু আশা ও প্রত্যাশা নিয়েই জীবন এগিয়ে চলে। তাই করোনার মত বিধ্বংসী ভাইরাস দূর হোক। আর কবির ভাষায়— এসো হে বৈশাখ এসো এসো… মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD