শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৬ অপরাহ্ন

ওয়ালটনকে নিয়ে একজন করোনা পজিটিভের আবেগঘন স্ট্যাটাস

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৩ মে, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার : হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকায় পানি গরম করার জন্য একটি ইলেকট্রিক কেটলি ও মশা মারার জন্য একটি ইলেকট্রিক ব্যাট খুবই প্রয়োজন ছিল।

পুরো শহর লকডাউন থাকায় সব ইলেক্ট্রনিক্স দোকান বন্ধ। গত তিন দিন ঠান্ডা পানি খেয়ে আছি। অনেক চেষ্টা করেও কোনোভাবেই একটি কেটলি জোগাড় করতে পারিনি।

ইভ্যালি-দারাজ সব জায়গায় খোঁজ নিলাম, তাদের ভাষ্যমতে ঢাকাতেও হোম ডেলিভারি পেতে ৩ থেকে ৭ কর্মদিবস সময় লাগবে! এদিকে এতদিন অপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ গরম পানি না খেলে যেকোনো মুহুর্তে আমার সর্দি-কাশি লেগে যেতে পারে।

এমন সময় ফেসবুক হোমপেজ স্ক্রল করতে করতে ওয়ালটনের ফেসবুক পেজ চোখে পড়লো। তারা লকডাউন অবস্থায় সীমিত আকারে হোম ডেলিভারি দিচ্ছে। তাদের টোল-ফ্রি হেল্পলাইন নম্বরে কল দিয়ে জানলাম, তাদেরও ঢাকার ভেতরে হোম ডেলিভারি দিতে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে।

বিস্তারিত খুলে বললাম, কিন্তু তিনি নিরুপায় হয়ে ক্ষমা চাইলেন এবং বললেন ওয়েবসাইটে দেওয়া এরিয়া ভিত্তিক শোরুমে কথা বলার জন্য।

আল্লাহর নাম নিয়ে কল দিলাম পল্টন ওয়ালটন শোরুমে। রিসিভ করলেন ম্যানেজার। তিনিও জানালেন এই অবস্থায় ৪৮ ঘণ্টার ভেতর ডেলিভারি সম্ভব নয়। তাকে বললাম ভাই আমি করোনা পজেটিভ হয়ে হাসপাতালে আইসোলেশনে আছি। এটি শোনার পর তিনি ব্যথিত হয়ে জানালেন অনলাইনে অর্ডার না করার জন্য। কারণ তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে হোম ডেলিভারি দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন এবং আমার কাছে ঠিকানা জেনে নিলেন।

১৫ মিনিট পর অন্য একটি নম্বর থেকে কল এলো, জানালো সে আমার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে এসেছে। আমি তো পুরোই অবাক! চার তলার জানালা দিয়ে গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একজন পিপিই পরে এসেছে ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। আমি সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজারকে কল দিলাম এবং বিকাশে কত টাকা পাঠাবো জানতে চাইলাম। ম্যানেজার দুটি প্রডাক্টেই ১০% ছাড় দিয়ে যে টাকাটা হয়, সেটি দিতে বললেন ও ডেলিভারি চার্জ দিতে বারণ করলেন। পরবর্তীতে যেকোনো সময় কোনো প্রডাক্ট লাগলে ফোন দিতে বললেন। এত সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথাগুলো বলতেছিল, শুনে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। ম্যানেজার পর্ব শেষ। এবার আরেক চমকের পালা!

ডেলিভারিম্যান প্রোডাক্ট দুটি আমার কাছে এসে হাতে দিয়ে যাবেন ম্যানেজারের নির্দেশ। আমি করোনা পজেটিভ তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। যতটা সময় লেগেছে শোরুম থেকে এখানে আসতে তার চেয়ে বেশি সময় লেগেছে তাকে বোঝাতে, যে আমার কাছে আসা খুবই রিস্কি পিপিই পরা থাকলেও। ফাইনালি সে গেটে প্রোডাক্ট দুটি রেখে যায়। আমি ওয়ার্ডবয়কে দিয়ে রুমে নিয়ে আসি। খুব কিউট লেগেছিল ছেলেটির কথাগুলো, দেখতে মন চাচ্ছিল ওনাকে। কিন্তু, এবার আমি নিরুপায়।

আসলে আমার অতিপ্রয়োজনীয় প্রডাক্ট দুটি হাতে পেয়ে যতটুকুনা খুশি হয়েছি। তারচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি ওনাদের আন্তরিকতায়। অনেক ধন্যবাদ, স্যালুট আপনাদের। আল্লাহ আপনাদের হেফাজতে রাখুক।

দাম কম রেখেছে কিংবা ডেলিভারি চার্জ নেয়নি বলে এত কিছু লিখিনি, তাদের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ দেখে আরো অনেক কিছু লিখতে মন চাচ্ছে। তাছাড়া ওষুধ খাওয়া, ফল খাওয়া, নামাজ পড়া আর শুয়ে থাকা ছাড়া আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় কিইবা কাজ আছে আমার?

এখন সকলকে খুবই আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। তবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে, অতি উৎসাহের প্রয়োজন নেই।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD