বর্তমান বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশ করোনাভাইরাস নামের অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। এই যুদ্ধে প্রাণহানি হওয়ার পাশাপাশি আগামী দিনে দুর্ভিক্ষ হওয়ার পথটা আরও প্রশস্থ হচ্ছে। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় প্রায় সকলের চোখ এখন এই অদৃশ্য শত্রুর দিকে।
তবে বিশ্বের কিছু মানুষের মধ্যে এখনও তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি করোনাভাইরাস। গৃহযুদ্ধ, বিচ্ছিন্নতাবাদী, স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী কিংবা বহিঃশত্রুর হামলা এখনো যেসব স্থানে থামেনি তা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে কথিত জঙ্গি হামলা
সন্তানের হাতে একে-৪৭ তুলে দেয় মা, গণমাধ্যমে তাদের বলা হয় জঙ্গি, কিন্তু স্থানীয়দের কাছে তারা বিদ্রোহী। ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে কাশ্মীর সঙ্কট সমাধান না করে ব্রিটিশদের প্রস্থানে এমন অবস্থা পৃথিবীর ভূস্বর্গ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। এই সঙ্কটের এখনো সমাধান হয়নি। এই সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে। ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর থেকে একের পর এক জঙ্গি হামলার খবর প্রকাশিত হয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
সর্বশেষ ২ মে ভারতশাসিত কাশ্মীরে কথিত জঙ্গিদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর এক কর্নেল ও এক মেজরসহ নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুই জঙ্গিও নিহত হয়েছে। এছাড়াও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে প্রায়শ ঘটে গুলি বিনিময়ের ঘটনা।
ইয়েমেনে সৌদি জোটের হামলা
২০১৫ সালে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে উচ্ছেদ করে রাজধানী সানা দখলে নেয় হুথি বিদ্রোহীরা। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে রিয়াদে আশ্রয় নেন সৌদি সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদি। ২০১৫ সালের মার্চে হুথি’র বিরুদ্ধে মিত্রদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ‘অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে রিয়াদ। সেই অভিযান এখনো অব্যাহত আছে। এই যুদ্ধকে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। বিশ্ব তেল বাণিজ্যে আধিপত্য বজায় রাখতে এডেন ও লোহিত উপসাগরের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের জন্য মূলত এই যুদ্ধ।
করোনার কারণে গত ৮ এপ্রিল ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেয় সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তবে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলমানারে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ৯ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ইয়েমেনের বেশ কয়েকটি শহরে ৩২টি স্থল ও ২৩০টি বিমান হামলা চালিয়েছে সৌদি জোট।
প্রায় ৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে ইয়েমেন। এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সঙ্কট
মুসলিম বিশ্বের পবিত্র স্থান জেরুজালেম ও আল-আকসা মসজিদ দখল এবং ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে অবৈধ বসতি স্থাপনাকে কেন্দ্র করে চলা ইসরায়েল ফিলিস্তিন সঙ্কট এখনো সমাধান হয়নি। এই সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ প্রকাশের পর।
জেরিড কুশনারের সহায়তায় এই চুক্তি প্রকাশের পর বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো ও জাতিসংঘ তা প্রত্যাখ্যান করলেও সেই চুক্তি মোতাবেক ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করেছে ইসরায়েল। আটক করা হচ্ছে ফিলিস্তিনের বাসিন্দাদের। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই খবর তেমন একটা প্রকাশিত হয় না।
আজ মঙ্গলবার প্যালেস্টাইন ক্রনিকল সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন অভিযোগে ফিলিস্তিনি শিশুদের কারাগারে পাঠাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং তাদের বসত বাড়ি গুড়িয়ে দিচ্ছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায় একটি বাড়ি ভেঙে ফেলার দৃশ্য।
সিরিয়া ও ইরাকে কুর্দিদের ওপর তুরস্কের আগ্রাসন
দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি করে আসা মুসলিম কুর্দিদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে কুর্দি নিধন অভিযান চালিয়ে আসছে এরদোয়ানের সরকার। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে এখনো কুর্দিদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে তুরস্কের সেনাবাহিনী। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিতে প্রায়শ কুর্দিদের বিদ্রোহী সংগঠন পিকেকে বা ওয়াইপিজি সদস্য হত্যার খবর প্রকাশিত হয়। আনাদোলু এজেন্সিতে গত ২২ এপ্রিল প্রকাশি এক সংবাদে বলা হয়েছে গত এক সপ্তাহে ১১২ জন পিকেকে জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে। এর পর গত ২৫ এপ্রিল ডেইলি সাবাহ সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে তুর্কি বাহিনীর হাতে ২০ জন কুর্দি বিদ্রোহীর মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়।
এছাড়াও কুর্দিদের সমর্থনে তুর্কি সরকারের বিরোধিতা করার কারণে কারাগারে প্রেরণ করা হয় ইয়োরাম গানের দলের কয়েকজন সদস্যকে। তাদের মধ্যে ২৮৮ দিন অনশন করে গত ২ এপ্রিল হেলেন বুলেক, ২৯৭ দিন অনশন করে গত ২৪ এপ্রিল মোস্তফা কোয়াক এবং সর্বশেষ ৩২৩ দিন অনশনের পর গত ৬ মে ইব্রাহিম গোকেকের মৃত্যু হয়েছে।
এই দেশগুলো ছাড়াও আর কিছু জায়গা যেমন- আফগানিস্তানে তালিবান হামলা, আফ্রিকার দেশগুলোতে বোকো হারামসহ বেশকিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের হামলার ঘটনা ঘটছে।
লাইট নিউজ