ডেস্ক রিপোর্ট : ভারতে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের নিরিখে মৃত্যুর হার বেশি পশ্চিমবঙ্গে। আর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটছে কলকাতায়।
রোববার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে আরও ১৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ৩৭ জন কলকাতার বাসিন্দা। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মারা গেছে ১৪ জন। তাদের মধ্যে ১০ জনই কলকাতার।
এই তথ্যের নিরিখে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের ‘কেস ফেটালিটি রেট’ (সিএফআর) সর্বাধিক।
যে কারণে কলকাতায় কেন করোনায় আক্রান্তরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন তার কারণ খুঁজতে শুরু করেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।
এ বিষয়ে দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল জিনোমিক্স (এনআইবিএমজি) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড) যৌথভাবে গবেষণা করছে।
সংস্থা দুটি কলকাতায় করোনায় মৃতদের নমুনা সংগ্রহ করে এতে পাওয়া ভাইরাসের পরীক্ষা করছে।
ফলের বিষয়ে রোববার নাইসেডপ্রধান শান্তা দত্ত বলেন, লকডাউন শুরুর পর থেকে কলকাতায় প্রাণঘাতী ভাইরাসটি অনেকবার নিজের রূপ বদলেছে। আর তা হয়েছে অল্প সময়ের মধ্যেই। ভাইরাসটির বহু মিউটেশনের কারণে চিকিৎসায় তেমন একটা সফল হওয়া যায়নি।
নাইসেডপ্রধান বলেন, ভাইরাসটি মাত্র কয়েক দিনেই অনেকবার মিউটেশন ঘটিয়েছে। এখন আমরা দেখছি তার এই রূপ বদলের প্রভাব কতটা মারাত্মক পর্যায়ে যাচ্ছে।
উদাহরণ দিতে গিয়ে শান্তা দত্ত জানান, চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাসের টাইপ বদলে ভাইরাসের যে-টাইপের দেখা সব চেয়ে বেশি মিলছে, তা হলো– ‘A2a’। কলকাতায় ‘A2a’-এর পাশাপাশি ‘B’ ক্ল্যাডের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। আমরা নতুন সব করোনার ভয়াবহতা নিরীক্ষণে কাজ করছি।
তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, আরও গবেষণার পরই জানা যাবে কলকাতায় করোনা রোগীরা বেশি মারা যাচ্ছেন কেন।
নাইসেডের সঙ্গে একমত পোষণ করে কেন্দ্রীয় জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘হ্যাঁ, এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে– ভাইরাসের চরিত্রের বদল ঘটছে কিনা। ’
তবে তিনি এর সঙ্গে আরও কিছু প্রসঙ্গ যোগ করেন।
তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে কিনা, রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসছেন কিনা, এসব বিষয়ও বিচার্য।
গবেষণা সংস্থা এনআইবিএমজির বিশেষজ্ঞ অরিন্দম মৈত্র বলেন, আমরা ভাইরাসটির গতিবিধি বিশ্লেষণ করছি। কিছু বলার সময় আসেনি এখনও।
গবেষক নিধানবাবু জানান, উহানে উৎপত্তি নেয়া করোনাভাইরাসটি ছিল ‘O’ টাইপ। জানুয়ারির শেষেই এই মূল টাইপ ১১টি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। প্রতি মাসে এই ভাইরাস দুই-তিন বার করে রূপ বদলেছে। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে রূপ বদলে তা ‘A2a’ হয় আর এর সংক্রমণ মাত্রা বেড়ে যায়।
তবে মিউটেশন মানেই যে আতঙ্ক, এমন ভাবার কারণ নেই বলে জানান নিধানবাবু।
তিনি বলেন, প্রতিটি মিউটেশনে ভাইরাসের শক্তিক্ষয় হয়। অনেকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে মিউটেশন মানেই ক্ষতিকর, এমনটি ভাবা যাবে না।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা