সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

কোটালীপাড়ায় ঝুপড়িতে মানবেতর কোয়ারিন্টিনে নারী স্বাস্থ্যকর্মী

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০

 

ঢাকার একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী (২১)। গত ২১শে এপ্রিল তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী একটি নির্জন স্থানে পুকুরের মধ্যে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তার মধ্যে কোয়ারিন্টিনে রাখেন। প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী ওখানে অবস্থান করছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লখন্ডা গ্রামে। এ ঘটনাটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর গোটা উপজেলাব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে।

জানা গেছে, ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী। করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়ে দিলে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ি থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুরের ভিতরে তালপাতা দিয়ে একটি মাঁচা(ঝুপড়ি ঘর) তৈরি করে কোয়ারেন্টিনে রাখে।

ভুক্তভোগী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী জানান, আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তিনি ওখানে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে তিনি অনেক মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। আর আজ এখানে থেকে তার নিজের স্বাস্থ্যগত অধিকার হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা ওনার আগে জানা ছিল না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, “আমার স্বামী নেই। আমার এই মেয়েটার আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়েটির এখনো বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায় কে নেবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এলাকাবাসীর সকলের সিন্ধান্তে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে। ”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারিন্টিনে রাখতে পারতাম। আমরা এই স্বাস্থ্যকর্মীকে ওখান থেকে এনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করব। অপরদিকে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা এভাবে ঝুপড়ি ঘরের ভেতর রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অনেকের ফেসবুক ওয়াল থেকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

লাইট নিউজ/ফামুরা

 

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD