বাগেরহাট দেশের অন্যতম দুটি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদ। বাগেরহাটে এই ঐতিহ্যকে ঘিরে রয়েছে খানজাহান আলী (রহ) এর মাজার শরীফসহ রয়েছে ইউনেস্কো ঘোষিত আরও সতেরটি স্থাপনা।
এছাড়া রয়েছে বেসরকারি বেশকিছু পর্যটন স্পট। বিশ্ব ঐতিহ্য দুটি দেখার জন্য বাগেরহাট সব থেকে উত্তম পর্যটন এলাকা। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক দেশি ও বিদেশি দর্শনার্থী আসেন এখানে। কিন্তু খোদ বাগেরহাট শহর বা শহরের আশপাশে পর্যটন কর্পোরেশনের কোনো হোটেল বা মোটেল ছিল না। মোংলায় একটি হোটেল থাকলেও বাগেরহাট শহর থেকে দূরত্বের কারণে পর্যটকরা খুলনায় গিয়ে অবস্থান করেন। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি ও বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বাগেরহাটের রনবিজয়পুর গ্রামের খানজাহান আলী (রহ) এর মাজার মোড়ে নির্মিত হচ্ছে ৭তলা বিশিষ্ট পর্যটন মোটেল।
সংশ্লিষ্টদের দাবি পর্যটন কর্পোরেশনের এই মোটেল বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। দীর্ঘদিন পরে হলেও পর্যটন কর্পোরেশনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িতরা।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে শহরের মাজার মোড়ে ৩৩ শতকের বেশি জমির উপরে এই মোটেল নির্মিত হচ্ছে। সাততলা বিশিষ্ট এই ভবনে ৩০টি কক্ষ, ৫০ আসন বিশিষ্ট রেস্টুরেন্ট, অফিস রুম, অভ্যর্থনা কক্ষ, বারবিকিউ রুম ও গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে। পুরো ভবনের আয়তন হবে ২ হাজার ৭৬০ বর্গ মিটার। এর সাথে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বাগানও করা হবে। এসব কর্মযজ্ঞে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬ হাজার টাকা। খাজা রাব্বি বিলকিস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ করছে।
২০১৯ সালের জুনে শুরু হওয়া এই ভবনের কাজ ২০২১ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে বাগেরহাটে পর্যটকদের আনাগোনা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, পদ্মার এ পারে তিনটি বিখ্যাত জায়গার মধ্যে দুটোর অবস্থান বাগেরহাটে। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের অবস্থান করার জন্য কোন আবাসিক ব্যবস্থা ছিলনা।পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি করে আসছিলাম। বাগেরহাটকে পর্যটন জোন হিসেবে ঘোষণার দাবিও করেছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে। দীর্ঘদিনের দাবি ও এলাকার চাহিদার প্রেক্ষিতে পর্যটন কর্পোরেশন বাগেরহাটে একটি মোটেল নির্মাণ করছে। যা এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। বাগেরহাটে এই মোটেল নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়কে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
স্থানীয় টুরিস্ট গাইড তানজীম ও মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পর্যটন কর্পোরেশনের এই ভবন বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে আরও সহায়তা করবে৷ কিন্তু এর পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণকেও পর্যটকদের প্রতি সহযোগিতামূলক আচরণে উদ্যোগী হতে হবে৷ বিগত দিনগুলোতে দেখা গেছে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকরা স্থানীয়দের কাছ থেকে আশানুরূপ ভালো আচরণ পান না৷ এক্ষেত্রে পর্যটন এলাকার মানুষদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে
“ষাটগম্বুজ-সুন্দরবন ট্যুরিজম” নামের ট্যুর অপারেটরের পরিচালক মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু বলেন, মাজার মোড়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের নির্মাণাধীন বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তবে এই ভবনের পাশাপাশি এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সড়কের পাশের অবকাঠামোকে নান্দনিক করতে হবে। পর্যটনস্পটগুলোর আশপাশের সকল শ্রেণির মানুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে যাতে তারা পর্যটকদের সাথে ভালো ব্যবহার করেন।
এছাড়া ষাটগম্বুজ, মাজার, মোংলাসহ যেসব স্থানের রেস্টুরেন্টে পর্যটকরা খাবার খায় সেসব রেস্টুরেন্টের কর্মচারীদেরকেও প্রশিক্ষণ প্রদানের দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মহা-ব্যবস্থাপক (পিটিএস) ও প্রকল্প পরিচালক মো. জাকির হোসেন সিকদার বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সারা বাংলাদেশে ব্যাপক কাজ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে খানজহান আলী (রহ) এর মাজার সংলগ্ন মোড়ে ৭ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
২০২১ সালের জুনের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে। এছাড়া বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা এলাকা ঘিরে বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
লাইট নিউজ