গত ৮ এপ্রিল শনাক্তের সংখ্যা পঞ্চাশের কোটা অতিক্রম করে। আর তার পর দিনই ছাড়িয়ে যায় শতকের ঘর। এর পর থেকেই বাড়তেই আছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ১ মে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৭১ জন। ওই দিন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ছিল ৮ হাজার ২৩৮ জন।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৮৬৩ জন। অর্থাৎ গত ১৪ দিনে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এই অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, বাংলাদেশ সংক্রমণের পিক টাইম বা শীর্ষে পৌঁছাবে কবে।
এ ব্যাপারে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলছেন, সপ্তাহ দেড়েক আগের পরিস্থিতি বিবেচনা করে রোগতত্ত্ববিদরা ধারণা করেছিলেন যে, মে মাসের শেষ বা জুনের প্রথম দিকে সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছাবে। কিন্তু এখন বিধি-নিষিধের শিথিলতার কারণে সেটা পিছিয়ে যাবে।
পরিস্থিতি নিউইয়র্কের মতো হলে পিক টাইম এগিয়ে আসবে, তবে কমতে সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুশতাক হোসেন বলেন, শীর্ষবিন্দু অতিক্রম করলেই বোঝা যাবে যে, এটি পার হলাম। কিন্তু তার আগে কিছু বলা মুশকিল। কারণ ঈদ উপলক্ষে মানুষ কতটা শৈথিল্য দেখাচ্ছে বা কতটুকু বিধি-নিষেধ মানছে তার ওপর পিক টাইমের বিষয়টি নির্ভর করবে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বেনজীর আহমেদ বলছেন, কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তার ওপর পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে।
তার মতে, পিক টাইমট আসাটা নির্ভর করছে নানা ফ্যাক্টরের ওপর। যে দেশ যেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে তার ওপর ভিত্তি করেই সেখানে সংক্রমণের সর্বোচ্চ পর্যায় এসেছে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, চীন সংক্রমণ দমাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, ফলে সেখানে পিক টাইম দ্রুত এসেছে। অন্যদিকে, ইতালিতে সংক্রমণের শীর্ষ পর্যায় এসেছে অনেক দেরিতে। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো পিক টাইম এসেছে বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশে বর্তমানে সংক্রমণের উল্লম্ফনের কারণ হিসেবে তিনি গৃহীত পদক্ষেপগুলো যথাযথ কার্যকর না হওয়া ও পর্যাপ্ত পরীক্ষার অভাবকে দায়ী করছেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, ধারণা করা হয়েছিল, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং ব্যাপক হারে নমুনা পরীক্ষা করা গেলে মে মাসের শুরুতে পিক টাইম আসতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে গার্মেন্টস কারখানা ও দোকানপাট খুলে দেয়া হলো। সেইসঙ্গে ‘লকডাউন’ যথাযথভাবে না মানায় এখন সংক্রমণ বাড়ছে। সেইসঙ্গে সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনও হচ্ছে।
তার মতে, বিষয়টা পুরোপুরি নির্ভর করছে আমাদের ওপর। মে মাস শেষে যদি বিধি-নিষেধ উঠে যায়, অর্থাৎ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়, তাহলে সব একাকার হয়ে যাবে। আর সেটা হলে সংক্রমণের পিক টাইম বা শীর্ষ সময় আসাটা বিলম্বিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী চক্র তৈরি হবে। আর এর ফলে গরীব মানুষরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
লাইট নিউজ