করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক এবং প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে গঠন করা এ তহবিল থেকে ক্ষুদ্র গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন, যা ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে হিসাবায়ন হবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ঋণ সুবিধা দেয়া হবে। তবে নিজ বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ঋণ বা বিনিয়োগ খেলাপি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এ স্কিমের আওতায় ঋণ বা বিনিয়োগ প্রদান করা যাবে না।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা সার্কুলার আকারে জারি করা হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যয় বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দেশের নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক এবং প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের আয় উৎসারী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছেন না। গ্রামীণ অর্থনীতিতে দেশের নিম্ন পেশাজীবী কৃষক এবং প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবদান অনস্বীকার্য। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলমান রাখা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এই আবর্তনশীল পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে।
সার্কুলার অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে কৃষি এবং বিভিন্ন আয়ের উৎস কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার স্থানীয় উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ তহবিলের ঋণ সুবিধা পাবে। এছাড়া অতি দরিদ্র অথবা কোনো অনগ্রসর গোষ্ঠীভুক্ত ব্যক্তি এবং অসহায় ও নিগৃহীত নারী সদস্য এ ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন। এ তহবিলের মেয়াদ হবে তিন বছর।
দেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ হবে। তবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করবে এই স্কিম থেকে পুনঃঅর্থায়নে আগ্রহী তফসিলি ব্যাংক, যারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বার্ষিক মাত্র ১ শতাংশ সুদে তহবিল নিতে পারবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যাংকগুলো এই তহবিল দেবে সাড়ে ৩ শতাংশ সুদে। আর গ্রাহক পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো ধার্য করতে পারবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ, যা ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি হিসাবায়ন হবে। এছাড়া গ্রাহকদের থেকে ভর্তি ফি, পাস বই, ফরম পূরণ এবং নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা খরচ আদায় করতে পারবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান।
সার্কুলারে বলা হয়, এ স্কিমের আওতায় ক্ষুদ্রঋণ ক্যাটাগরিতে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা এবং আয় উৎসাহী কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্ত ন্যূনতম পাঁচ ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপ ভিত্তিক অর্থায়নের পরিমাণ হবে ৩ লাখ টাকা।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে স্কিমের আওতায় একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এককভাবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা এবং যৌথ প্রকল্পের আওতায় ন্যূনতম পাঁচ ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপ ভিত্তিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবে। তবে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে ঋণের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে।
গ্রুপ গঠন এবং এর কার্যাদি পরিচালনার বিষয়ে সব সদস্যের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি থাকতে হবে। কোন ব্যক্তি ক্ষুদ্র ঋণ এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণের মধ্যে যেকোনো একটি একক অথবা গ্রুপভুক্ত ঋণ পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।
এই স্কিমের আওতায় কোনো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান অর্থায়নকারী ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তহবিলের ৭৫ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ খাতে এবং ২৫ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতে বিতরণ করতে পারবে।
ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের মেয়াদ হবে বিতরণের তারিখ থেকে গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১ বছর। আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পর্যায়ে দিনের মেয়াদ হবে গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ দুই বছর। তবে এক্ষেত্রে একজন একক উদ্যোক্তা বা একটি গ্রুপ শুধুমাত্র একটি ক্যাটাগরিতে এই স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধা পাবেন।
লাইটনিউজ/এসআই