বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১০ পূর্বাহ্ন

দাম কম, ঝাল প্রচুর বোম্বাই শিঙাড়া

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২

পুরনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মানুষের জটলা দেখে কৌতূহল হলো। এগিয়ে যেতেই বুঝতে পারলাম তারা সবাই প্রায় ভোজনরসিক। কেউ আরাম করে শিঙাড়ার কামড় দিচ্ছেন, কেউ সস সমেত প্লেট হাতে অপেক্ষায় আছেন। আবার অনেকে ঝটপট শিঙারা নিয়ে ছুটছেন বাড়ির দিকে।

ওদিকে দোকানিরও দম ফেলার ফুরসত নেই। ফুটন্ত তেলে অনেকটা মেশিনের মতো শিঙাড়া ছাড়ছেন। একটু পরপর হাতা দিয়ে নাড়ছেন। গরম তেলে শিঙাড়ায় একটু লালচে আভা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলেই পাকা শিকারীর মতো তুলে নিচ্ছেন সেগুলো। কিন্তু ঠান্ডা হওয়ার তর সইছে না কারো। প্লেটে প্লেটে সেগুলো চলে যাচ্ছে গ্রাহকের হাতে।

শিঙাড়া দেখতে ছোট। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম- এগুলো কি শিঙাড়া ভাই? প্রশ্নের উত্তর শুনে রীতিমতো অবাক হলাম। বললেন, বোম্বাই মরিচের শিঙাড়া।

এর আগে আলু শিঙাড়া, সবজি শিঙাড়া, কলিজার শিঙাড়া, ক্ষিরের শিঙাড়ার নাম পর্যন্ত শুনেছি কিন্তু এই প্রথম শুনলাম এমন নাম। অথচ দোকানের কোনো নাম নেই, বসার জায়গা পর্যন্ত নেই। অথচ সুনাম তার যথেষ্ট। লোকমুখে দোকানটি পরিচিত ‘ঝাল শিঙাড়ার দোকান’ হিসেবে।

কথা হয় দোকানে দায়িত্বরত রুবেল হাসানের সঙ্গে। রুবেল জানান, প্রায় দশ বছর থেকে শিঙাড়া বিক্রি করছেন তারা। ৮ জন স্টাফ প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই কাজটি করেন। তবে ১১টার পর থেকে তৈরি হয় বোম্বাই মরিচের শিঙাড়া। সকালে থাকে নাস্তার আয়োজন। প্রতিদিন প্রায় ২৫০০ শিঙাড়া বিক্রি হয়। প্রতিটির দাম তিন টাকা। শিঙাড়ায় সিদ্ধ আলু, বোম্বে মরিচ, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ ও কাঁচা পেয়াজ ব্যবহার করা হয়।

কথা হয় কয়েকজন ভোজনরসিকের সঙ্গে। তারা জানান, এই শিঙাড়া খেতে অন্যরকম। মরিচের ফ্লেবারে এর স্বাদ অতুলনীয় হয়ে ওঠে। তবে ঝাল সামান্য বেশি। এতে সমস্যা হয় না বলে জানালেন একজন।

শিঙাড়ার ইতিহাস বেশ পুরনো। এর জন্মস্থান কিন্তু বাংলাদেশ কিংবা ভারত নয়। ইতিহাসবিদদের মতে, ভারতে ২ হাজার বছর আগে শিঙাড়ার আবির্ভাব ঘটে। ইরানি ইতিহাসবিদ আবুল ফজল বায়হাকির দাবি, ইরান থেকে শিঙাড়া বাংলায় এসেছে। অর্থাৎ তাঁর মতে শিঙ্গাড়ার জন্মস্থান ইরান। এই ঐতিহাসিকের ‘তারিখ-এ-বেহাগি’ বইয়ে ‘সাম্বোসা’র উল্লেখ রয়েছে। এই সাম্বোসাই শিঙাড়ার আদি রূপ।

শিঙ্গাড়ার জন্ম নিয়ে মতান্তর এবং বিতর্ক থাকলেও ভারতীয় উপমহাদেশে আসার পর এর স্বাদ আর রেসিপিতে এসেছে পরিবর্তন। ষোড়শ শতকে পর্তুগিজরা ভারতের মাটিতে পা রাখার পর ‘আলু’র সঙ্গে আমাদের পরিচয়। এরপর থেকেই শিঙাড়ার মূল উপকরণ হয়ে ওঠে আলু। আলু ছাড়া এখন শিঙাড়া কল্পনা করা যায় না।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD