ডেস্ক রিপোর্ট : উপসর্গ নেই, তবুও ৭ বার করোনা পজিটিভ যে ছাত্রের মহামারি করোনায় চারদিকে মৃত্যুর মিছিল দেখে ভয় চেপে বসেছিল মনে। বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে তাই তড়িঘড়ি ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে ছুটেছিলেন। সে প্রায় এক মাস আগের কথা। তার পর আর বাড়ি ফেরা হয়নি ১৯ বছরের জয় পাটনির।
এই এক মাসে উপসর্গহীন অবস্থায় সাত-সাত বার করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে তার শরীরে। যার জেরে হাসপাতাল আর কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করেই দিন কাটছে তার।
জয় ভারতের গুজরাটের বডোদরার বাসিন্দা। স্থানীয় এমএস কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। করোনা সংক্রমণের নিরিখে বডোদরায় যে ক’টি হটস্পট চিহ্নিত করেছে সরকার, তার মধ্যে তাদের নগরওয়াড়া এলাকাও রয়েছে। গত মাসে সেখানে এক শিশুর মৃত্যু হয়। তাতেই ভয় পেয়ে যায় গোটা পরিবার। করোনার জেরেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে ধারণা জন্মায় তাদের।
পরে যদিও জানা যায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে ছোটেন জয় এবং তার বাবা-মা। সেখানে তাদের তিন জনের শরীরেই সংক্রমণ ধরা পড়ে। প্রথমে গোত্রী মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে রাখা হয় তাদের। ১৩ দিনের মাথায় সেখান থেকে বাবা-মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও, এখনও ছাড়া পাননি জয়।
হাঁচি, কাশি, মাথা ধরা, ক্লান্তি ভাব, এই ধরনের কোনও উপসর্গই নেই জয়ের শরীরে। কিন্তু গত ১২ এপ্রিল থেকে যত বারই করোনা পরীক্ষা হয়েছে, ততবারই তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। তাই হাসপাতাল আর কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করেই দিন কাটছে তার।
একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, হাঁচি-কাশি, ক্লান্তি ভাব, মাথা ধরা কোনও সমস্যাই নেই তার। বরং প্রথম দিন থেকেই একেবারে স্বাভাবিক তিনি।
পরিবার পরিজনদের থেকে দূরে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতে ভাল না লাগলেও, দিব্যি সময় কেটে যায় বলে জানিয়েছেন জয়। তার কথায়, এখানে সবকিছুই করতে পারছি আমি। ইচ্ছা হলে বারান্দায় পায়চারী করি। সিনেমা দেখি। ফোনে কথা বলি। আবার গেমও খেলি। এ ভাবেই দিন কেটে যায়। বার বার পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসায় মা দুশ্চিন্তা করছে। তবে আমি অত ভাবছি না। দুশ্চিন্তা করে লাভটাই বা কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার উপসর্গ না থাকলে রোগীকে ছাড়ার আগে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পিসিআর (আরটি-পিসিআর) টেস্ট করা হয়। এতে মরা ভাইরাসও ধরা পড়ে। হতে পারে সেই কারণেই বার বার জয়ের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। তবে এ নিয়ে জয়কে এখনও পর্যন্ত সঠিক ভাবে কিছু জানাননি চিকিৎসকেরা।
এ দিকে, উপসর্গহীন অথবা মৃদু উপসর্গ মিলেছে এমন রোগীদের একটানা তিন দিন জ্বর না এলে, অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন না থাকলে, ১০ দিন পর্যবেক্ষণে থাকার পরই তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ ক্ষেত্রে বাড়ি ফিরে সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে তাদের। কিন্তু তার থেকে বাবা-মা যদি ফের সংক্রমিত হন, সেই ভয়ে বাড়ি ফিরতে রাজি হননি জয়। যত ক্ষণ না রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে, তিনি কোয়ারেন্টাইনেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
লাইটনিউজ