সেকাল:-
আবু-বিন-খাইয়াম, খুউব ভালো ছেলে, গ্রামের সবাই আবু বলেই ডাকে। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে কোনমতে নাস্তা সেরে দৌড় দেয় স্কুলে। স্কুল তিন মাইল দূরে, হেটেই যেতে হয় তবে একা নয়, দল বেধে ছেলে মেয়েরা সবাই একসাথে যায়। মা প্রতিদিনই টিফিন ভরে দেন ব্যগে, তবে আবুর টিফিন খেতে ভালো লাগে না। বাসায় এসে মায়ের হাতে স্বাদ করে খাওয়া, আহা কি মজা! খাওয়ার পর সোজা মাঠে, সন্ধা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত খেলা, ফিরে এসে হারিকেনের চিমনিগুলো পারিস্কার করে হারিকেন জালানো, যদি কোরোসিন কম থাকে তাহলে কোরোসিন ভরা। সন্ধা ছয়টায় পড়তে বসা, সাড়ে ন’টার মধ্যে খেয়ে ঘুম। বাবার সাথে খুব কমই দেখা হয় আবু’র। আবু ঘুম থেকে ওঠার আগেই বাবা বেরিয়ে পড়েন কাজে, ফিরেন রাত দশটা নাগাদ।
একাল:-
এখন আবু আর আবু নেই সে এখন পুরোদমে আবু-বিন-খাইয়াম। বিরাট অফিস। দারুন ব্যস্ততা। ফজরের নামাজের সময় ঘুম থেকে ওঠার পর রাতে প্রায়ই সাড়ে বারটা থেকে এক’টা বাজে ঘুমোতে। সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়েই অফিস, সারাদিন ব্যস্ততা। বাসায় ফিরেও কত কাজ, সবই যে জরুরী তা নয় তবে বিনোদনের জন্য এগুলোর প্রয়োজন আছে। হাঁ, ফেসবুক-ইউটিউব-হোয়াটস্ আপ-ভিডিওকল- ইন্সটাগ্রাম- বিবিসি-সিএনএন- টেলিভিশন রিয়ালিটি শো আরও কতকি। ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। অনেক সময় আবু ভাবে ২৪ ঘন্টার দিন না হয়ে ৩৬ ঘন্টারও তো হতে পারতো। মানুষের কাজ যত বেড়ে গিয়েছে। পৃথিবী যত এগিয়েছে তাতে আরও এতটু সময় পেলে মন্দ হত না।
বর্তমানকাল:-
আবু’র ব্যস্ততা কমে গেেছ। যেতে হয়না অফিসে বাসা থেকেই চলছে কাজ। নাই মেয়েকে স্কুলে নেয়ার তাড়া। আনন্দ নেই ফসবুক-ইউটিউব-হোয়াটস্ আপ-ভিডিওকল কিংবা ইন্সটাগ্রামে। চোখে-মুখে শুধুই আতংক। অজানা আতংক। তার মাথায় শুধু সেনিটাইজার-মাস্ক-হেন্ডগ্লেভাস্ লেবু-গরম পানি, আদা চা, কিংবা কালো জিরা ঘুরপাক খাচ্ছে।
তাই আবু ভাবছে ২৪ ঘন্টার দিনটা একটু ছোট হলে মন্দ হত না। দুশ্চিন্তার দিনগুলো দ্রুত পার হয়ে যেত।
লেখক: শাকিল আহমেদ, ঢাকা।