থাইল্যান্ডের পাতায়া শহরের বিচ রোড সমুদ্র সৈকত থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টায় শুরু হয় কোরাল আইল্যান্ড অভিমুখে যাত্রা। বিভিন্ন দেশের পর্যটকবাহী শত শত স্পিড বোড হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে ছুটে চলে কোরাল আইল্যান্ডের দিকে। যাত্রার দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে ‘সি ওয়াক’ বা সমুদ্রের নিচে হাঁটা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এই সামুদ্রিক কার্যক্রমটির জন্য পাতায়াতে আসেন। আন্দামান সাগরের ৪০ থেকে ৫০ ফিট নিচে পর্যটকদের হাঁটিয়ে নিয়ে বেড়ানো হয়। মাথায় অক্সিজেন ভাল্ব লাগানো অবস্থায় পানির গভীরে থাকতে হয় প্রায় আধা ঘণ্টা। রোমাঞ্চকর পর্যটকদের জন্য এটি একটি অন্যতম আকর্ষণ।
স্পিড বোডগুলো কোরাল আইল্যান্ডে যাওয়ার আগে একটি পয়েন্টে দাঁড়ায়। সেখানেই করানো হয় ‘সি ওয়াক’ বা সমুদ্রে হাঁটা। যারা এই রাইডসটিতে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী তাদের স্পিড বোড থেকে একটি ছোট জাহাজে উঠানো হয়। মূলত ওই জাহাজটি সেখানে স্থায়ীভাবে সেখানে নোংগড় করা থাকে। জাহাজে পৌছানোর পর কারা কার কার্যক্রমটি করতে ইচ্ছুক তা জিজ্ঞেস করা হয়। এরপর তাদের হাতে আলাদা রঙের একটি রশি বেধে দেয়া হয়। যেন তাকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। সেখানে তাদের পেমেন্ট করতে হয়। এটির মূল্য ১০০০ থেকে ২২০০ থাই বাথ হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় জনপ্রতি ২৬’শ থেকে সাড়ে ৫ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
টিকিট সংগ্রহের পর দ্বিতীয় ধপে সমুদ্রের নিচে নামার আগে কিছু নিয়ম-কানুন শিখানো হয়। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক একাধিক বার প্রশিক্ষণ দেন এবং অনুশীলন করান। প্রশিক্ষক বলে দেন পানির নিচে কি ভাবে কোন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে। মূলত ৪০ ফিট পানির নিচে কোনো সমস্যা হলে ডান হাত বা বাম হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে উপরের দিকে উঠানোর সংকেত দিতে হয়। আর সব ঠিক থাকলে বৃদ্ধা আঙুল এবং দ্বিতীয় আঙুল একত্রে লাগিয়ে ওকে সংকেত দিতে হয়।
তবে যাদের উচ্চতাজনিত সমস্যা কিংবা এয়ার প্রেসারের সমস্যা রয়েছে। তাদের জন্য প্রথম এক বা দুই মিনিট ভীতিকর মনে হতে পারে। দুই কানে তীব্র ব্যাথা অনুভব হতে পারে। তবে মাত্র দু থেকে তিন মিনিটের ব্যবধানে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আর সমাধান না হলে মাথার ওপর লাগানো অক্সিজেন ভাল্বের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে মুখে কিছুটা অক্সিজেন নিয়ে নাক চেপে ধরে স্বজোরে ফু দিতে হয়। তাহলে এ সমস্রার সমাধান হয়ে যায়।
মূলত সমুদ্রের নিচের উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ দারুণভাবে উপভোগ করা যায় ‘সি ওয়াক’-এর মাধ্যমে। একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি সমুদ্রের নিচের জীব-বৈচিত্র সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা পাওয়া যায়।পানির ৫০ থেকে ৬০ ফিট নিচে ‘সি ওয়াক’ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা কর্মীরা সব সময়ই তৎপর থাকে। পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে সব সময়ই দর্শনার্থীদের সংকেত দেয়। এরপর দুই পা সমানভাবে মাটিতে ফেলে খানিকটা হাঁটিয়ে নিয়ে বেড়ানো হয়। শুধু তাই নয়, পাউরুটির টুকরা দিয়ে মাছ একেবারে হাতের নাগালে নিয়ে আসে। সামুদ্রিক শৈবালগুলোকে হাতে স্পর্শ করে দেখার সুযোগ হয়।