রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:০১ অপরাহ্ন

করোনায় তছনছ হেলাল খানের পরিবার

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩ জুন, ২০২০

শৈশব থেকেই আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা নায়ক হেলাল খান। পারিবারিক সূত্রে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাংলাদেশে আসা–যাওয়া তাঁর। পরবর্তীকালে নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পেলে দেশেই বেশির ভাগ সময় থাকতেন তিনি। স্ত্রী, তিন ছেলে এবং নয় ভাইবোনের সবাই নিউইয়র্কে থাকেন। এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশেই ছিলেন তিনি। হঠাৎ বাবার অসুস্থের খবরে ছুটে যান আমেরিকা। তাঁর সঙ্গে কথা হলে জানা যায় করোনার এই মহামারিতে পরিবার নিয়ে ভালো নেই এই অভিনেতা।

গত মাসে করোনা পজিটিভ হয়ে হেলাল খানের বাবা মারা গেছেন। একই কারণে মারা গেছেন তাঁর পরিবারের আরেক সদস্য। তাঁর দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, ভাতিজা–ভাতিজিসহ ৫ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। এই নায়ক বলেন, ‘করোনায় আমাদের পুরো পরিবারের ওপর দিয়ে ভয়াবহ ধকল যাচ্ছে। পুরো পরিবার আক্রান্ত। সবকিছু মিলিয়ে সময়টা ভালো যায়নি।’

আমেরিকা থেকে তখন তিনি অল্প সময়ের জন্য দেশে আসতেন। সেই সময়েই ঢাকা ক্লাবে খ্যাতিমান নির্মাতা এহতেশামের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই নির্মাতা ১৯৮৭ সালে তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেন হেলাল খানকে। রাজিও হয়ে যান এই তারকা। তিনি জানতেন না ছবির জন্য দীর্ঘদিন দেশে থাকতে হবে। সময়–সুযোগের অভাবে এই গুণী নির্মাতার সঙ্গে ওই সময় কাজ করা হয়নি। পরে ১৯৯৪ সালে গীতিকার ও প্রযোজক মাসুদ করিমের হাত ধরে ঢালিউড চলচ্চিত্রে পা রাখেন তিনি। তাঁর অভিষেক ছবি ‘প্রিয় তুমি’। এই ছবিতে ওমর সানী এবং মৌসুমীর সঙ্গে নবাগত নায়ক হিসেবে যোগ হয় হেলাল খানের নাম। প্রথম ছবি বাণিজ্যিক সফলতা পেলে ভাগ্য বদলে যায় এই নায়কের। পার্শ্বনায়ক থেকে হয়ে ওঠেন ঢালিউডের নায়ক হেলাল খান। একে একে তিনি ভক্তদের সাগরিকা, জুয়াড়ি, হাছনরাজা, বাজিগরসহ অনেক সফল ছবি উপহার দেন।

৫০টির মতো ছবি করে ২০০৩/০৪ সালের দিকে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এই নায়ক। এই প্রসঙ্গে হেলাল খান বলেন, ‘একসময় নিম্ন মানের ভালগার ছবি হওয়ায় নিজেকে দূরে সরিয়ে নিই। তারপরে তো সিনেমার জগৎই নষ্ট হয়ে গেল। ওই সময় থেকে সিনেমা যায় যায় অবস্থা। বিলীন হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের ভাগ্যটা খারাপ, ওই সময় চলচ্চিত্রের অবস্থা খুবই করুণ হয়ে যায়। কিছু প্রযোজক ভালগার ছবি নির্মাণে উৎসাহিত ছিল। তাঁরা কিছু টাকার জন্য এই রকম নোংরা, রুচিহীন ছবি করেছেন। সেই সময়েই প্রযোজকেরা সিনেমার বারোটা বাজিয়েছেন।’ তারপরে ওই সময়েও তাঁর ইচ্ছে ছিল, প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ ধারার ছবিতে লগ্নি এবং অভিনয় করবেন। চেয়েছিলেন নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামকে দিয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনীভিত্তিক একটি ছবি করবেন। পরে নানা কারণে জাতীয় কবির ওপর তৈরি চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করা হয়নি। পরে নির্মাতাও প্রয়াত হন। এরপরে দু–তিনটি ছবিতে অভিনয় করলেও চলচ্চিত্রে সেভাবে ফেরা হয়নি এই অভিনেতার। তিনি বলেন, এখন সিনেমার অবস্থা ভালো ইচ্ছে আছে ফেরার।

হঠাৎ অভিনয় থেকে প্রযোজনায় আসেন হেলাল খান। নির্মাতা হিসেবে ‘আশা আমার আশা’ ছবি দিয়ে যাত্রা শুরু। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন রিয়াজ, শাবনূর, হেলাল খান প্রমুখ। এই ছবির একটি ঘটনা শেয়ার করে হেলাল খান বলেন, ‘আমাদের একটি ফাইটের দৃশ্য ছিল। আমি এবং রিয়াজ একসঙ্গে জাম্প দিব। সঙ্গে ভিলেনও ছিলেন। পরে ট্রাক থেকে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজ লুটিয়ে পড়ে। সেদিন রিয়াজের পা ভেঙে গেল। রিয়াজকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে হয়েছিল। আরও অনেক কারণে নির্মাতা হিসেবে প্রথম ছবিতেই অনেক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছিলাম। পরে রিয়াজ সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এলে অনেক রাত পর্যন্ত শুটিং করে ছবিটি ঈদে মুক্তি দিয়েছিলাম।’

সে সময়ে হেলাল খানের বেশ কিছু ছবির মধ্যে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘সাগরিকা’য় খলনায়ক চরিত্রটি তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই ছবির সাগরিকা গানটি অনেক দিন মানুষের মুখে মুখে ঘুরেছে। সেই গানটি তৈরি করা হয়েছিল ওই ছবির সহ–নায়ক আমিন খান এবং নায়িকা ঋতুপর্ণার। ছবি মুক্তি পেলে দেখা যায় গানটিতে ঠোঁট মেলান হেলাল খান। এই সম্পর্কে এই অভিনেতা বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারি, গানটি আমাকে দিয়ে করাবেন নির্মাতা। স্ক্রিপ্টে কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন গীতিকার রফিকুজ্জামান। অল্প সময়ের প্র্যাকটিসে গানটি করি। শিলিগুড়ি এবং বাংলাদেশ মিলিয়ে শুটিং হয়। সেদিন আমি ভয় পেয়েছিলাম। প্রস্তুত ছিলাম না।’ তিনি আরও বলেন, সে সময় সেটের অনেকেই সাগরিকা ছবিতে আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন। আমার সহ–অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা একদিন বলল, ‘দাদা, আপনি অভিনয় খুবই ভালো করছেন। কারও কথা শুনবেন না। যেভাবে করে যাচ্ছেন, এভাবেই করে যান।’

এই নায়ক এখনো খোঁজ রাখেন দেশের চলচ্চিত্রের। সবশেষ তিনি ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবি দেখেছেন। তিনি বলেন, এখন তো ভালো ছবি হচ্ছে, কিন্তু দর্শক তো নেই, হল নেই। শুনেছি ছবি হিট হলেও টাকা ফিরে আসে না।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD