সাভার প্রতিনিধি : সাভারে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন সাভারের ৭ পোশাক শ্রমিক। এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। সীমিত আকারে পোশাক কারখানা খুলে দিলেও কারখানা খোলার পর থেকেই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে বলে দাবি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।
গত ২৬ এপ্রিল থেকে রফতানিমুখী পোশাক কারখানাগুলো সীমিত পরিসরে খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বিজিএমইএ। খোলা রাখা কারখানায় কাজে যোগ দিতে ভ্যান-রিকশায় গাদাগাদি করে যাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা। এতে করে সাভারের পোশাক শ্রমিকদের আক্রান্তের ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
রোববার (৩ মে) সকালে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, একই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানে গাদাগাদি করে কারখানায় যাচ্ছেন একাধিক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। যাদের অনেকেই এসেছেন গ্রাম থেকে।
টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড মহাসড়কের আশুলিয়ার জামগড়া এলাকা দিয়ে একটি ভ্যানে করে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য যাচ্ছেন ৯ জন পোশাক শ্রমিক।
শারমিন নামের এক পোশাক শ্রমিক বলেন, কারখানায় না গেলে মরতে হবে- না খেয়ে। আর কাজে যোগ দিলে হয়তো খেয়ে মরতে পারব। একই সাথে পরিবারের লোকজনেরও একটা ব্যবস্থা হবে। তাই আল্লাহর ওপর ভরসা করেই কারখানায় যাই। রাস্তায় কোন গাড়ি নেই, ভ্যান রিকশার ভাড়া বাড়িয়েছে প্রায় ৩ গুণ। একা একা প্রতিদিন তো এতো টাকা দিয়ে কারখানায় যাওয়া সম্ভব নয়। সবাই মিলে যাতায়াত করলে কম খরচে যাওয়া যায়। তাই সবাই মিলে এক গাড়িতে ঝুঁকি নিয়েই কারখানায় যাই আমরা।
সাভারের উলাইল এলাকা দিয়ে রিকশা করে যাওয়া তিন শ্রমিকের একজন শাকিলা। তিনি বলেন, বাসা থেকে আমার কর্মস্থল প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে। হেঁটেও যাওয়া সম্ভব নয়, একা গেলে রিকশা ভাড়া চায় ৪০ টাকা। তিনজন মিলে রিকশায় গিয়ে ৪০ টাকা ভাগাভাগি করে দেই। এতে এক দিনের ভাড়া দিয়ে তিন দিন যেতে পারি। টাকার জন্য জীবনের মায়া ছেড়ে কারখানায় যাই। সেই টাকাই যদি বেতনের আগে খরচ হয়ে যায় তাহলে এতবড় ঝুঁকি নিয়ে লাভ কি। আমরা বাধ্য হচ্ছি এভাবে কারখানায় যোগ দিতে। কারখানা কর্তৃপক্ষ যদি অফিস যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতো তাহলে আমাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমত।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম বলেন, শ্রমিকরা এমনিতেই ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় কাজ করছেন। আর বিভিন্ন জায়গার শ্রমিকরা এভাবে একই ভ্যান অথবা রিকশায় গাদাগাদি করে কারখানায় গেলে সমস্ত কারখানা ঝুঁকিতে পড়বে। তাই শ্রমিকদের কারখানায় আনা নেওয়া করার জন্য বিশেষ পরিবহণ ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের মহামারিতে পড়তে পারেন শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা।
শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৫ শতাধিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণের পরেও কমছে না আক্রান্তের সংখ্যা। শিল্পাঞ্চল সাভারেও বাড়ছে এই আক্রান্তের সংখ্যা। আর এখন সংক্রমণ বিস্তার করছে পোশাক শ্রমিকদের মাঝে। এক ছাদের নিচে কাজ করছে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী শ্রমিকরা। সামাজিক দূরত্বের বালাই নাই শ্রমিক যাতায়াত ব্যবস্থায়।
এ ব্যাপারে যেসব কারখানা খোলা রয়েছে তার কর্তৃপক্ষকে বলব শ্রমিকদের কারখানায় সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থার পাশাপাশি যাতায়াতের জন্য বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করতে।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বলেন, পোশাক কারখানা খোলার পর সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গতকাল ২মে জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। খোলা কারখানাগুলোকে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হবে। খোলা রাখা কারখানাগুলোকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হবে।
লাইটনিউজ